কোরবানি সামনে রেখে ব্যস্ত সময় পার করছেন কামাররা


মো. ফরহাদ হোসেন, সিরাজগঞ্জ।। দরজায় কড়া নাড়ছে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসবের অন্যতম ঈদুল আযহা। আর মাত্র কয়েকদিন পরেই অনুষ্টিত হবে কুরবানির ঈদ। এই ঈদের অন্যতম কাজ হচ্ছে পশু কুরবানি করা। ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে পশু জবাইয়ের সরঞ্জাম প্রস্তুত করতে টুং টাং শব্দে ব্যস্ত সময় পার করছেন সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কামার শিল্পের কারিগররা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কামাররা কয়লার দগদগে আগুনে লোহাকে পুড়িয়ে পিটিয়ে তৈরি করছেন সব ধারালো সামগ্রী। তবে এসব তৈরিতে এখনো আধুনিকতার কোন ছোঁয়া লাগেনি। ফলে পুরানো সেকালের নিয়মেই চলছে আগুনে পুড়ে লোহা হতে ধারালো সামগ্রী তৈরির কাজ। মাংস কাটা ও কুরবানির পশু জবাই করার বিভিন্ন ধাপে ছুরি,দা,চাপাতি এসব ব্যবহার করা হয়। তাই পশু কুরবানিকে কেন্দ্র করে উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজার এলাকার কামার শিল্পীরা ব্যস্ত সময় পার করছে এই সকল যন্ত্র তৈরীতে।
দগদগে আগুনে গরম লোহা পিটাপিটিতে মুখর হয়ে উঠেছে কামার পল্লীগুলো।এ সকল ধারালো সামগ্রীর মধ্যে ওজন ও প্রকারভেদে দাম নির্ধারণ হয়ে থাকে। একটি মাঝাড়ি ধরণের দা ও কাটারি তৈরি করে ওজন অনুযায়ী ২শ’ ৫০টাকা থেকে ৩শ’ টাকা পর্যন্ত বিক্রয় হয়। ছুরি আকার ভেদে ১৫০ থেকে ২শ’ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়।
অর্জুন কর্মকার জানান, লোহা পিটিয়ে বিভিন্ন জিনিস তৈরি করা আমার পেশা, বাপ-দাদার পৈতিক সূত্রে আমি এই পেশায় জড়িত। সারাদিন হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রম করে যে কয়টি জিনিস তৈরি করি তা বিক্রয় করে খুব বেশি লাভ না হলেও পরিবার-পরিজন নিয়ে ডাল-ভাত খেয়ে বেচে থাকার স্বার্থে আদি এই পেশা আমি ধরে রেখেছি। তবে সাড়া বছর কাজ-কর্মের ব্যস্ততা তেমন না থাকলেও কুরবানী ঈদকে সামনে রেখে আমার কর্ম ব্যস্ততা বেড়ে গেছে। সাড়া বছর এই রকম কাজ থাকলে ভালই হত।
মানিক চন্দ্র কর্মকার জানান, আমার বাপ-দাদার মূল পেশা ছিল এটা। তারা গত হওয়ার পর ওই সূত্রে ধরে আমার জীবনেরও শেষ মূহুর্তে এই পেশা ধরে রেখেছি। সাড়া দিন চাকু, বটি তৈরি করে যা আয় হয় তা দিয়েই পরিবার-পরিজন নিয়ে খেয়ে বাঁচি। কেন না এই পেশা ছেড়ে অন্য কোন ভাল পেশায় যাব এই রকম আর্থিক সংগতি আমার নেই। তবে সরকারি ভাবে এবং এনজিওর মাধ্যমে আমাদের কামারদেরকে সুদ মুক্ত ঋন দিলে পাইকারি মূল্যে উপকরণ কিনতে পারলে অবশ্যই এই দেশীয় কামার শিল্প পূর্বের ন্যায় ঘুড়ে দাড়াবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *