শেরপুর উপজেলা  ভূমিহীন ও গৃহহীন মুক্ত ঘোষণা


মাসুম বিল্লাহ, শেরপুর, বগুড়া।। দু’চোখে স্বপ্ন ছিল পাকাবাড়িতে বসবাস, আর একটু নিজনামে জায়গা বা সম্পত্তির। অনেকটা অবাস্তব ছিল অসহায় জীবনে। পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করতে হতো অন্যের আশ্রয়ে বা পথ-ঘাটের ধারে। সেসব ভূমিহীন অসহায় মানুষগুলো এখন তাদের হৃদয়ের গভীরে লুকানো স্বপ্ন বর্তমানে বাস্তবে পরিণত হওয়ায় চোখেমুখে ও হৃদয়ে আনন্দধারা বিরাজ করছে। খুঁজে পেয়েছেন তাদের কাঙ্খিত স্বপ্নের ঠিকানা, ফেলছে শান্তির নিঃশ্বাস। খুশিতে আত্মহারা হয়ে কেঁদে ফেললেন ঘর ও জায়গা প্রাপ্ত অনেক ভূমিহীন পরিবাররা।
শেরপুরের ভূমিহীন ও গৃহহীন অসহায় আলাউদ্দিন, শামছুল হক, আশরাফ আলী, ডলি বেগম সহ একাধিকরা আত্মহারা হয়ে জানান, সন্তান-স্বামী নিয়ে একটি ঝুঁপড়ি ঘরে অন্যের আশ্রয়ে প্রশ্রয়ে থেকে কোনো রকমে দিনাতিপাত করে আসছি। দিনমজুরি করে যেখানে নুন আনতে পানতা ফুরায়, সেখানে পাকাঘর তৈরি করা স্বপ্ন দেখা ছাড়া আর কিছুই নয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের মতো একজন গরিবদের খবর নিয়ে ঘর তৈরি করে দিয়ে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দেয়ায় এটা আমার জীবনে সেরা উপহার পেলাম। স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি পাঁকা বাড়িতে ঘুমাতে পারবো। তবে এই ঘরে নামাজ পড়ে প্রধানমন্ত্রীর জন্য দোয়া করব, তিনি যেন অনন্তকাল বেঁচে থাকেন, আর এভাবে আমাদেরমতো গরীব ও অসহায়দের পাশে দাঁড়িয়ে কাজ করতে পারেন বলে আবেগে আপ্লুতভাবে ভূমিহীন পরিবারের সদস্যরা জানান।
১১ জুন বেলা ১১টা ২০ মিনিটের দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ৫ম পর্যায়ে ১৮ হাজার ৫৬৬ ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারকে জমি ও গৃহ প্রদান কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। মুজিববর্ষ উপলক্ষে আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর অধীনে বগুড়া জেলার শেরপুর উপজেলাকে ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত ঘোষনা করা হয়। এরপরই ৫ম পর্যায়ে উপজেলার ৪৫ জন ভূমিহীনদের বাড়ির চাবি ও দলিল হস্তান্তর করে উপজেলা প্রশাসন।
একই দিনে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই বাড়িগুলো হস্তান্তর কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় বগুড়ার শেরপুর উপজেলা হলরুমে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো সুমন জিহাদীর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী বিভাগীয় অতিরিক্ত কমিশনার (রাজস্ব) মো. ইমতিয়াজ হোসেন।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এসএম রেজাউল করিমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(রাজস্ব) আফসানা ইয়াসমিন, উপজেলা পরিষদের নব-নির্বাচিত চেয়ারম্যান শাহ জামাল সিরাজী। এ সময় অন্যান্যের বক্তব্য রাখেন উপজেলা স্বাস্থ্য প.প. কর্মকর্তা ডা. সাজিদ হাসান সিদ্দিকী, শেরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ রেজাউল করিম রেজা, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মো. ওবায়দুর রহমান, আশ্রয়ণ বিষয়ক জেলা টাস্কফোর্স কমিটির সদস্যবৃন্দ, সরকারি কর্মকর্তাগণ, ইউপি চেয়ারম্যানগণ, সাংবাদিকগণ, উপকারভোগীগণ। এরআগে শেরপুর উপজেলায় গৃহ নির্মাণ কার্যক্রমের উপর ভিডিও ক্লিপ্স এবং আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ কার্যালয় থেকে প্রেরিত ভিডিও ক্লিপ্স প্রদর্শন করা হয়।
উল্লেখ্য শেরপুর উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে ১ম পর্যায়ে ১৬৩টি, ২য় পর্যায়ে ১৭টি, ৩য় পর্যায়ে ১৪৫টি, ৪র্থ পর্যায়ে ১৭১টি ও ৫ম পর্যায়ে ৪৫টি সহ ৫৪১টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের মাঝে প্রধানমন্ত্রীর উপহার তুলে দেয়া হয়।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধন ঘোষণার পরপরই বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে আগত ভূমিহীন ও গৃহহীনদের হাতে ২ শতক জমিসহ ঘরের কবুলিয়ত দলিল, নামজারি খতিয়ান, রেকর্ড সংশোধনী ফি জমা দানের ডিসিআর, সার্টিফিকেট, দাখিলা ইত্যাদি তুলে দেওয়া হয়।
উপকারভোগীদের মধ্যে যাদের জমি আছে, তারা শুধু ঘর পাবে। যাদের জমি নেই, তারা ২ শতাংশ জমি পাবে (বন্দোবস্ত)। দুই কক্ষবিশিষ্ট প্রতিটি ঘর তৈরিতে প্রথম ধাপে খরচ হচ্ছে এক লাখ ৭১ হাজার টাকা। শেষ ধাপ(৫ম ধাপে) খরচ হয়েছে ৩ লাখ ৪ হাজার ৫’শ টাকা। সরকারের নির্ধারিত একই নকশায় হচ্ছে এসব ঘর। রান্নাঘর, সংযুক্ত টয়লেট থাকছে। টিউবওয়েল ও বিদ্যুৎ সংযোগও দেওয়া হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *